গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুর মহানগরের ৩৫ নং ওয়ার্ড অন্তর্গত কলমেশ্বর এলাকার এককালে ফুটপাতে বই বিক্রেতা মৃত ওয়াজ খানের ছোট ছেলে মোস্তফা কামাল খান।

ছোটবেলা থেকেই এই মুস্তফা কামাল খান অতি দুরন্ত ও ধান্দাবাজ স্বভাবের ছেলে। এলাকাবাসী ও বিভিন্ন মাধ্যমে সরেজমিনে কথা বলে জানা যায়, বেশ কিছুদিন আগেও মৃত ওয়াজ খানের পরিবার ছিল অত্যন্ত হতদরিদ্র। একাধিক ছেলেমেয়ে ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে মোস্তফা কামাল খানের বাবা ওয়াজ খান যখন নানা টানাপড়েন এর ভিতর দিয়ে তার সংসার চালাচ্ছিলেন তখন সে অবস্থা ছিল খুবই করুন। সংসারের টানাপোড়েনে তিনি এক প্রকার হাঁপিয়ে উঠেছিলেন।

নিঃস্ব রিক্ত হয়ে হয়ে অসহায় ওয়াজ খা আর কোন উপায় না দেখে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে অর্থাৎ আজকের নেতা মোস্তফা কামাল খানের মামার বাড়ি থেকে তার মায়ের প্রাপ্য ওয়ারিশ আনতে বাধ্য হন। মামার বাড়ির ওয়ারিশ পেয়ে তারা প্রথমে বোর্ডবাজারে একটি অবৈধ আইসক্রিম ফ্যাক্টরি স্থাপন করেন। সুতরাং ফুটপাতের বই বিক্রেতা থেকে হয়ে যান আইসক্রিম ফ্যাক্টরি মালিক। কিন্তু এখানেই গল্পের শেষ নয়। ফুটপাতে বইয়ের দোকান কিংবা আইসক্রিম ফ্যাক্টরি দেওয়া এগুলো তাদের বাপ ছেলেদের প্রথম বাটপারির স্তর।

একদিকে যেমন সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন রং ও অন্যান্য মিশ্রণের সমন্বয়ে আইসক্রিম তৈরি করে সেগুলো বাজারজাত করেছে এবং লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, অন্যদিকে বইয়ের কোম্পানির মূল্য উঠিয়ে তারা নিজেরা সেখানে মূল্য লাগিয়ে সে বইগুলো চড়া দামে মানুষের কাছে বিক্রি করে মানুষের সাথে তারা প্রতারণা করে আসছে।

শুধু তাই নয়, মুস্তফা কামাল খানেরা বাপ-ছেলে তিনজনে তিন দল করে । অর্থাৎ যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন সেই সরকারি দল থেকে তারা পুরোপুরি সুবিধা নেয় এবং নিজেদের আখের গোছায়। এক সময়ে যে মোস্তফা কামাল খানের পরিবার দুবেলা-দুমুঠো খেতে পারত না সরকারি দল কিংবা মহানগরের নামিদামি নেতাদের ব্যবহার করে তারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজারে তাদের নিজস্ব বাড়ি থাকলেও সেখানে না থেকে বিলাসবহুল জীবনযাপন এর জন্য মাসিক ৪০ হাজার টাকা ভাড়ায় তারা উত্তরায় বসবাস করছেন।

গাজীপুর মহানগরের এক প্রভাবশালী নেতার পরিচয় দিয়ে সে যাচ্ছে তাই করছেন। এলাকায় জমি দখল, টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজি, মাদক নিয়ন্ত্রণ সহ সবকিছুই তাঁর নখদর্পণে। প্রতি বছর কোরবানির গরুর হাটে দালালি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে মোস্তফার বিরুদ্ধে। গেল <strong>কোরবানির ঈদে বোর্ডবাজার এর গরুর হাটে সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্দ প্রায় লক্ষ টাকা</strong> এবং ইজারাদারদের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে সাংবাদিক এবং ইজারাদারদের তোপের মুখে পড়েন মোস্তফা কামাল খান।

সেই গরুর হাট থেকে দৌড়ে পালিয়ে এ যাত্রায় রক্ষা পান সে। আর সেই থেকেই মোস্তফা কামাল খান হয়ে যান দৌড় মোস্তফা।

আর এই দৌড় মোস্তফা এবং তার পরিবারের কুকর্মের কথা বলে আসলে শেষ করা যাবে না। কথিত আছে মুস্তফা কামাল খানের বাবা ওয়াজখা জানাজার মাঠে গিয়ে ঐ মৃত ব্যক্তির নিকট টাকা পাবে বলে দাবি করে এবং টাকা না দিয়ে কবর হবেনা বলে জোর করে বসেন। সেখানে উপস্থিত এলাকা বাসী তদন্ত করে দেখতে পাই যে আসলেই মৃত ব্যক্তির নিকট সে কোন টাকা পায় নাই। সেই মিথ্যের জন্য সেদিন তাকে জুতার মালা পরিয়ে এলাকাবাসী পুরো এলাকা ঘুরিয়ে ছিলেন।

আসলে বাটপারি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। আসলে সত্য বলতে কি, তাদের পরিবারের অতীত বলার কোন ইচ্ছা ছিলো না। কিন্তু না বললে তাদের আসল রুপটি বেরিয়ে আসতো না। কথায় বলে, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। সেটিই সত্যি হলো টাউট মোস্তফার ক্ষেত্রে।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে একটি নির্মম হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় এবং রুপগঞ্জ থানায় মামলা হয়। সেই হত্যা মামলার আসামি মোস্তফা ও তার স্ত্রী নাসরিন। নাসরিন পলাতক থাকলেও গেল রবিবার বোর্ডবাজার থেকে লাইব্রেরি দোকান থেকে মোস্তফা ডিবির হাতে গ্রেফতার হন।

তার গ্রেফতারের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং সকল মহল থেকে তার শাস্তির দাবি করা হয়। মোস্তফার মত প্রতারক যাতে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসতে না পারে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।